সন্দ্বীপ (Sandwip) বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি দ্বীপ। এটি মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত। সন্দ্বীপ বাংলাদেশের অত্যন্ত প্রাচীন একটি দ্বীপ যেখানে প্রায় ৪,৫০,০০০ জনসংখ্যা রয়েছে। এই দ্বীপটি ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫-১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত।
দ্বীপের প্রত্যেকটি জায়গা দেখার মতন। ফসল ভরা মাঠ সবুজ প্রকৃতি, হাট, বাজার সব কিছু। দ্বীপের উত্তর থেকে দক্ষিণের সব প্রান্ত ঘুরে দেখতে পারেন অনায়াসে। দ্বীপের উত্তরে তাজমহলের আদলে নির্মিত শত বছরের পুরনো মরিয়ম বিবি সাহেবানী মসজিদ। মসজিদ সংলগ্ন বড় দিঘী, মাজার। দ্বীপের দক্ষিণের ঐতিহ্যবাহী শুকনা দিঘী। এছাড়া রয়েছে অসংখ্য মসজিদ, স্কুল, মাদ্রাসা, বড় বড় খেলার মাঠ। ভাগ্য ভালো থাকলে দেখেতে পারবেন পুরনো বাউল জারী সারি গানের আসর।
সন্দীপ এর দর্শনীয় স্থান গুলো :
দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান জেটি
সন্দ্বীপ গুপ্তছড়া ঘাটে নির্মিত হয়েছে দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান জেটি। জেটির দুই পাশের ল্যাম্পপোস্টের আলোর সৌন্দর্য দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন। সাগরের গর্জনের শব্দের সাথে সাথে সাগরের শীতল হাওয়া আপনাকে এনে দিবে অনাবিল প্রশান্তি। এই জেটির দুই পাশে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন, যা জেটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সমুদ্র সৈকত
সৈকতটি সন্দ্বীপ এর রহমতপুরে ইউনিয়নে অবস্থিত। স্থানীয়দের কাছে এটি রহমতপুর পুরাতন স্টিমারঘাট নামে পরিচিত। পড়ন্ত বেলায় পশ্চিম আকাশে তেজ কমে যাওয়া সূর্যটা সৈকতের প্রান্ত জুড়ে ছড়িয়ে দেয় রক্তবর্ন আভা। এই সমুদ্র সৈকতে আপনি দেখতে পাবেন সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য। সৈকতটি ভ্রমণ পিপাসুদের তির্থ স্থানে পরিনত হয়েছে যা ক্যাম্পিং এর টেন্ট পিচ এর জন্যে আদর্শ। সমুদ্র সৈকতটির দৈঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার।
সবুজ চর
নাম শুনেই হয়তো অনেকটা অনুমান করতে পারছেন, কেন এই জাইগাটির নাম সবুজচর। স্থানীয় অনেকে এই স্থানটিকে গ্রিনল্যান্ডও বলে। এই স্থানটি সন্দ্বীপ এর দীঘাপাড় ইউনিয়নে অবস্থিত। প্রকৃতির শান্ত স্নিগ্ধরূপ, সবুজ ঘাসের গালিচায় মোড়ানো এই চরটি। যতদূর চোখ যাবে সবুজ আর সবুজের নয়নাভিরাম দৃশ্য আপনাকে উৎফুল্ল করবে।
এই চরে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন এবং এই বনে রয়েছে বালিহাঁস, বক, ময়না, চিল, মাছরাঙা, টিয়া, ঘুঘুসহ আরো অনেক রকম পাখি। শীতকালে অতিথি পাখির কলকাকলীতে মুখরিত হয়ে ওঠে এই গ্রীনল্যান্ডটি। ভাড়া চালিত মোটরসাইকেল, সিএনজি দিয়ে সন্দ্বীপ কমপ্লেক্স থেকে ৩০-৪০ মিনিটে মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যাবে এই সবুজ চরে।
ভ্রমণের সেরা সময় :
সন্দ্বীপ ভ্রমণ করার জন্যে শীতকাল সময়টাই সবচেয়ে উপযুক্ত। এ সময় আপনি চাইলে ক্যাম্পিং করতে পারবেন। আর সমুদ্র শান্ত থাকায় ও গরম না থাকায় এই সময়টাতে মানুষ ভ্রমণ করতে পছন্দ করে।
খাবারের সুবিধা :
সন্দ্বীপ এর স্থানীয় খাবার হোটেলে সাধারন সকল খাবার পাবেন এবং খাবারের মানও স্বাভাবিক মানের হবে, আহমরি কিছু আশা করবেন না। খরচ প্রতিবেলা একশ-দেড়শ টাকা জনপ্রতি। হোটেল গ্রীন ভিউ (আবাসিক) হোটেলের গ্রীন চিলিজ্ রেস্টুরেন্টে ইন্ডিয়ান, চাইনিজসহ সকল ধরনের খাবার পাবেন। শিবের হাট এলাকায় গেলে পাবেন প্রায় ৮০ বছরের ঐতিহ্য বিনয় সাহার ছানা মিষ্টি।
স্টিমারে চেপে সন্দ্বীপ :
ঢাকা থেকে স্টীমারে সন্দ্বীপ যেতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে যেতে হবে সদরঘাট। সপ্তাহে তিন দিন এই সার্ভিস থাকে যা সকাল ৯ টায় সদরঘাট ছেড়ে যায় সন্দ্বীপ এর উদ্দেশ্যে।
সড়ক পথে যেতে চাইলে :
সড়ক পথে যেতে চাইলে দেশের যে কোন প্রান্ত হতে চট্টগ্রামগামী বাসে করে চলে যান সীতাকুণ্ডের কুমিরা স্টিমার ঘাট। ভাড়া বিভিন্ন জায়গা হতে বিভিন্ন। ঢাকা হতে নন-এসি চেয়ার কোচের ভাড়া ৫০০ টাকার মধ্যে। বাসের সুপারভাইজারকে বলে রাখবেন, কুমিরা স্টিমার ঘাটে নামিয়ে দিতে। বাস আপনাকে যেখানে নামাবে সেখান থেকে জনপ্রতি ১০-২০ টাকা ভাড়ায় ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা করে চলে যাবেন স্টিমার ঘাটে। এই ঘাটের নাম কুমিরা-গুপ্তছরা ঘাট। এই প্রান্তে কুমিরা এবং অপর পাশে সন্দ্বীপ এর গুপ্তছরা।
কুমিরা থেকে সন্দ্বীপ যাওয়ার ভাড়া জনপ্রতি স্পীডবোটে ৩০০-৩৫০ টাকা, ট্রলারে ১৫০ টাকা আর সী-ট্রাকে ১২০ টাকা। ট্রলার জোয়ার এর সময় ছাড়ে, আর সী-ট্রাক বেলা বারোটার দিকে। তাই সবচেয়ে ভালো অপশন স্পীডবোট। তাই সেখানে পৌঁছেই কাউণ্টারে গিয়ে নাম লিখিয়ে সিরিয়াল নিয়ে নিবেন। ওপারে পৌঁছে গুপ্তছরা ঘাট থেকে এনাম নাহার (মূল শহর) পর্যন্ত সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা, সরাসরি পশ্চিমপাড় ঘাট চলে গেলে ভাড়া ২৫০-৩০০ টাকার মধ্যে থাকবে।
সন্দ্বীপ থাকার ব্যবস্থা :
সন্দ্বীপ টাউন কমপ্লেক্সে পৌঁছে হোটেল নিয়ে নিন। এনাম নাহারে বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে যাদের মধ্যে অন্যতম
হোটেল গ্রীন ভিউ (আবাসিক)
ফয়সাল গেস্ট হাউস (আবাসিক)
হোটেল মোল্লা
রয়েল ইন আবাসিক
এছাড়া উপজেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে থাকা যেতে পারে, এজন্য যোগাযোগ করতে হবে উপজেলা পরিষদে। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে স্থানীয়দের সহায়তা নিতে পারেন, তবে নিরাপত্তার ব্যাপারে সাবধান থেকে অবশ্যই।
ক্যাম্পিং সুবিধা :
যারা ক্যাম্পিং করতে চান তাঁরা সন্দ্বীপ টাউন কমপ্লেক্সে পৌঁছে সোজা সরাসরি চলে যান দ্বীপের পশ্চিমে একেবারেই নদীর কিনার ঘেঁষে রহমতপুর বীচ। এক্ষেত্রে স্থানীয়দের সাহায্য নিতে পারেন। উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করে তাবু করে নিন। রাতের মিটিমিটি আলো, খোলা আকাশের নিচে নদীর কলকল ধ্বনি ঘন কুয়াশায় কয়েকটি রাত পার করে দিতে পারবেন একেবারেই অনায়াসে। এ ছাড়া কবির কফি হাউজ তো আছেই। যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই কবির কফি হাউজের দেখা মিলবে।