সেইন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন/দর্শনীয় স্থান। এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এটির অবস্থান বাংলাদেশের মূলভূখন্ডের সর্ব দক্ষিণে। কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন। প্রচুর নারিকেল গাছ থাকায় সেন্টমার্টিনকে স্থানীয়ভাবে ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ বলা হয়।
কেনো যাবেন ?
আপনি যদি ভ্রমণ পিয়াসী হয়ে থাকেন, স্বর্গীয় সৌন্দর্য্যমন্ডিত এ দ্বীপটি আপনাকে অবশ্যই একবার হলেও ভ্রমণ করা উচিৎ। সমুদ্রের স্বচ্ছ নীল জলরাশি, সারি সারি নারিকেল গাছ, প্রবাল পাথর এ দ্বীপকে করেছে অনন্য, যা ভ্রমণ প্রেমী মানুষকে দুর্নিবার আকর্ষণে কাছে টানতে থাকে।
কখন যাবেন ?
সধারণত অক্টোবর-নভেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত এই পাঁচ মাস সেইন্টমার্টিন ভ্রমণের পিক সিজন। এই সময়টায় রেগুলার টেকনাফ থেকে সেইন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল করে। আপনি চাইলে অন্য সময়ও যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে স্পিডবোট অথবা ট্রলারে করে যেতে হবে। যদিও এই সময়টাতে সেইন্টমার্টিন ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়ে থাকে।
কীভাবে যাবেন ?
সেন্টমার্টিন যাওয়ার সবচেয়ে সহজতম এবং সুবিধাজনক উপায় হলো দেশের যেকোন স্থান থেকে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ চলে আসা। কারন সেন্টমার্টিন যাবার বেশিরভাগ জাহাজই টেকনাফ থেকে চলাচল করে।এখান থেকে পক সিজনে প্রতিদিন সকাল ৯ঃ৩০ টায় বেশ কয়েকটা বড় জাহাজ ছেড়ে যায় এবং বিকেল ৩ঃ০০ টায় টেকনাফ ফিরে আসে। জাহাজের পাশাপাশি স্পীডবোট, ট্রলারও চলাচল করে। তাছাড়া কক্সবাজার থেকে এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস এবং চট্টগ্রাম থেকে এমভি বে ওয়ান শিপ সরাসরি সেন্টমার্টিনে পর্যটক পরিবহণ করে।
ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফগামী বাস গুলো হলো- হানিফ, শ্যামলী, সেন্টমার্টিন পরিবহন, রয়েল কোচ, এস আলম, গ্রীন লাইন ইত্যাদি। ভাড়া ক্লাস অনুযায়ী ১০৫০ টাকা থেকে ২২০০ টাকা পর্যন্ত। । ঢাকার গাবতলী, কলাবাগান, ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ ও আবদুল্লাহপুর থেকে রাত ৮ঃ০০/৮ঃ৩০ টার মধ্যে যাত্রা শুরু করে সকাল ৭/৮ টার মধ্যে টেকনাফ পৌঁছে যায়। যারা কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ যেতে চান তারা লোকাল বাস, মাইক্রো, জিপ, অথবা সিএনজি ভাড়া করে টেকনাফ যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে সকাল ৬ টার মধ্যে রওনা দিতে হবে। ভাড়া পড়বে ১৫০ থেকে ২৫০ জনপ্রতি। আর চট্টগ্রাম থেকে রাত ১২ টার দিকে বেশ কিছু বাস টেকনাফ এর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া বাস অনুযায়ী ৫৫০ থেকে ১২০০ টাকা।
কোথায় থাকবেন ?
সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপনের জন্য নানান মানের রিসোর্ট, হোটেল ও কটেজ রয়েছে। পশ্চিম বীচের রিসোর্টগুলো কোলাহল মুক্ত। নিরিবিলি সময় কাটাতে চাইলে পশ্চিম বীচের রিসোর্টগুলোতে থাকতে পারেন। আর বাজেট হোটেলের জন্য উত্তর বীচ ভালো। ছুটির ছাড়া গেলে খুব রিলাক্সে কম খরচে ঘুরে আসতে পারবেন আর ছুটির দিনে যাওয়ার প্ল্যান থাকলে আগে থেকে বুকিং করে যাওয়া উত্তম। তবে চাইলে সেখানে গিয়েও পছন্দমত রিসোর্ট ঠিক করতে পারবেন। ক্লাস অনুযায়ী সেন্টমার্টিনে হোটেল বা রিসোর্ট ভাড়া প্রতিরাতে ১০০০ থেকে ৪০০০ হাজার টাকা পড়বে।
কী কী দেখবেন ?
সেন্টমার্টিনে আসলে আলদাভাবে দেখার কিছুই নেই কারন সেন্টমার্টিন পুরোটাই দেখার মতো একটা দ্বীপ। অসীম নীল আকাশের সাথে সমুদ্রের নীল জলের অপূর্ব মিতালি আর সারি সারি নারিকেল গাছ আপনাকে মুগ্ধ করবেই। পূর্ব বীচে সূর্যোদয় আর পশ্চিম বীচে সূর্যাস্ত হতে পারে আপনার দেখা অন্যতম সুন্দরতম দৃশ্য। আর মধ্যরাতের পূর্ণিমার চাঁদ হবে লাইফটাইম মেমোরি। ছেঁড়াদ্বীপ যেতে মিস করবেন না। ওখানে চমৎকার একটি সময় কাটবে আপনার। জেটিঘাট থেকে ট্রলার অথবা স্পীডবোটে করে ছেঁড়াদ্বীপ যেতে পারবেন। ভাড়া ট্রলারে ১৫০ এবং স্পীডবোটে ২৫০ টাকা পড়বে।
কী কী খাবেন ?
সেন্টমার্টিন মাছের দ্বীপ। প্রায় সব ধরণের সামুদ্রিক মাছ যেমন রূপচাঁদা, কোরাল, ইলিশ, পোয়া, লবস্টার, কালোচাঁদা সহ আরো নানান ধরণের মাছ পাওয়া যায়। তাছাড়া সামুদ্রিক কাঁকরা, অক্টোপাস, স্কুইডও পেয়ে যায়। রাতে মাছের বারবিকিউ করতে ভুলবেননা। প্রায় প্রতিটি রিসোর্টে বারবিকিউ এর ব্যবস্থা রয়েছে। চাইলে ওখানে করতে পারেন অথবা জেটির দিকে বড় যে বাজার রয়েছে সেখানে অনেক রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেখানে দেখেশুনে বাছাই করে বারবিকিউ করতে পারেন। সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে খাবার রয়েছে সেটা হলো ডাব। সেন্টমার্টিন গেলে অবশ্যই ডাব ট্রাই করবেন।
সেন্টমার্টিনে ভ্রমন খরচ :
যে কোন ভ্রমণে খরচ কত হবে তা অনেকটাই আপনার উপর নির্ভর করবে। অর্থাৎ আপনি কেমন পরিবহনে যাবেন, কেমন হোটেল বা রিসোর্টে থাকবেন, কী খাবেন, কী করবেন ইত্যাদির উপর নির্ভর করবে। তাছাড়া ছুটির দিনের খরচ নরমাল দিনের খরচের চেয়ে বেশী হবে। উত্তর বীচের হোটেলগুলোতে থাকলে এবং বাজারের দিকে সাধারণ খাবার হোটেল গুলোতে খেলে খরচ অনেকটাই কমে আসবে।
যদি দলগত ভাবে যান তবে নানান দিক থেকে খরচ কমে আসবে। মোটামুটি মানের হোটেলে একরাত থাকলে একজন ব্যাক্তি ৪০০০ থেকে ৫০০০ হাজার টাকায় খুব সুন্দর ভাবে ঘুরে আসতে পারবেন।