দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের সমাধিস্থল ওয়ার সিমেট্রি এখন চট্টগ্রামের অন্যতম পর্যটন স্পট। এটি চট্রগ্রামের মেহদীবাগ গোল পাহাড় এলাকায় অবস্থিত। বিশ্বযুদ্ধে ইন্দো-বার্মা রণাঙ্গনে আজাদ হিন্দ ফৌজের আক্রমণে মিত্রবাহিনীর যেসব সৈনিক প্রাণ হারান তাদের সমাহিত করা হয় চট্টগ্রামের বাদশা মিয়া রোডের প্রাকৃতিক এ পরিবেশে। ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেওয়া এই ওয়ার সিমেট্রিকে দেওয়া হয়েছে নান্দনিক রূপ। অসাধারণ সাজানো গোছানো পরিবেশ আপনার মন ভোরিয়ে দিবে। পাহাড়ের ভাঁজে অপরূপ সাজে দাঁড়িয়ে থাকা এ সমাধিস্থল দেখতে ভিড় করেন অনেক ভ্রমণপিপাসু।
ওয়ার সিমেট্রির প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই প্রথম চোখে পড়বে সমাধিস্থলের মাঝখান বরাবর একটি দৃষ্টিনন্দন ক্রশ চিহ্নিত বেদি। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা যুদ্ধ সমাধিতে চল্লিশ জাতের বৃক্ষরাজি রয়েছে। রয়েছে দেবদারু, গর্জন, মেহগনি, ইউক্যালিপ্টাস, পাম গাছ। এ ছাড়া গন্ধরাজ, বেলি, পাতাবাহার, লেনথেনা, গোলাপ লেটারলিফসহ কয়েক শতাধিক দেশি-বিদেশি ফুলের গাছ সমাধিতে এক অবর্ণনীয় স্বর্গীয় মোহের সৃষ্টি করেছে। একই সময়ে আরও একটি সিমেট্রি করা হয় কুমিল্লার ময়নামতিতে। চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদীবাগস্থ বাদশা মিয়া সড়কে প্রায় ৭ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এই ওয়ার সিমেট্রিতে ৭৫৫ জন সৈনিকের সমাধি রয়েছে। এখানে প্রবেশ করতে কোন ফি এর দরকার হয়না।
সময়সূচী :
প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১২ টা এবং বিকেল ৩ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্যে প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত থাকে।
কিভাবে যাবেন ?
ঢাকা থেকে ওয়ার সিমেন্ট্রি যেতে হলে আগে আপনাকে চট্টগ্রাম যেতে হবে। কমলাপুর টার্মিনাল থেকে বিআরটিসি করে আর সায়দাবাদ বাস ষ্টেশন থেকে সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক প্রভৃতি বাস করে আপনি চট্টগ্রাম যেতে পারেন। গ্রিনলাইন, সোহাগ, সৌদিয়া, টি আর, হানিফ ইত্যাদি পরিবহনের এসি বাস চট্টগ্রাম যায়। ভাড়া ৮৫০-১১০০ টাকা। আর এস আলম, সৌদিয়া, ইউনিক, শ্যামলী, হানিফ, ঈগল প্রভৃতি পরিবহনের সাধারণ বাসে ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা।
সিলেট থেকে সড়ক ও রেলপথে চট্টগ্রাম আসা যায়। সড়কপথে গ্রিনলাইন পরিবহনের এসি, নন এসি বাস যায় চট্টগ্রাম। এছাড়া সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে সপ্তাহের শনিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০ টা ১৫ মিনিটে আন্তনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, সপ্তাহের রবিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯ টা ২০ মিনিটে আন্তনগর উদয়ন এক্সপ্রেস এবং সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০ টা ৩০ মিনিটে মেইল ট্রেন জালালাবাদ এক্সপ্রেস ছেড়ে যায় চট্টগ্রামের উদ্দেশে। ভাড়া ১৭৫ থেকে ১২০০ টাকা।
বিশ্বযুদ্ধে ইন্দো-বার্মা রণাঙ্গনে আজাদ হিন্দ ফৌজের আক্রমণে মিত্রবাহিনীর যেসব সৈনিক প্রাণ হারান তাদের সমাহিত করা হয় চট্টগ্রামের বাদশা মিয়া রোডের প্রাকৃতিক এ পরিবেশে
ট্রেনে বা রেলপথে চট্টগ্রাম :
ট্রেনে ঢাকা-চট্টগ্রামের রুটে মহানগর প্রভাতী ঢাকা ছাড়ে সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে, চট্টলা এক্সপ্রেস সকাল ৯ টা ২০ মিনিটে, মহানগর গোধূলি ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৩ টায়, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৪ টা ২০ মিনিটে, তূর্ণা ঢাকা ছাড়ে রাত ১১ টায়। ভাড়া ১৬০ থেকে ১১০০ টাকা।
বিমানে বা আকাশপথে চট্টগ্রাম :
ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান, জিএমজি এয়ারলাইনস ও ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ারে সরাসরি চিটাগং যাওয়া যায়।
চট্রগ্রাম শহরের যেকোনো যায়গা থেকে রিক্সা কিংবা অটো রিক্সায় চড়ে আপনি মেহদীবাগের এই ওয়ার সিমেন্ট্রিতে ঘুরে আসতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন ?
চট্টগ্রামে নানান মানের হোটেল আছে। নীচে কয়েকটি বাজেট হোটেলের নাম ঠিকানা দেয়া হলো। এগুলোই সবই মান সম্পন্ন কিন্তু কম বাজেটের হোটেল।
১. হোটেল প্যারামাউন্ট, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম : নুতন ট্রেন স্টেশনের ঠিক বিপরীতে । আমাদের মতে বাজেটে সেরা হোটেল এটি। সুন্দর লোকেশন, প্রশস্ত করিডোর (এত বড় কড়িডোর ফাইভ স্টার হোটেলেও থাকেনা)। রুমগুলোও ভালো। ভাড়া নান এসি সিঙ্গেল ৮০০ টাকা, ডাবল ১৩০০ টাকা, এসি ১৪০০ টাকা ও ১৮০০ টাকা।
২. হোটেল এশিয়ান এসআর, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম : এটাও অনেক সুন্দর হোটেল। ছিমছাম, পরিছন্ন হোটেল। ভাড়া : নন এসি : ১০০০ টাকা, এসি : ১৭২৫ টাকা।
৩. হোটেল সাফিনা, এনায়েত বাজার, চট্টগ্রাম : একটি পারিবারিক পরিবেশের মাঝারি মানের হোটেল। ছাদের ওপর একটি সুন্দর রেস্টুরেন্ট আছে। রাতের বেলা সেখানে বসলে আসতে ইচ্ছে করবেনা। ভাড়া : ৭০০ টাকা থেকে শুরু। এসি ১৩০০ টাকা।
৪. হোটেল নাবা ইন, রোড ৫, প্লট-৬০, ও আর নিজাম রোড, চট্টগ্রাম। একটু বেশী ভাড়ার হোটেল। তবে যারা নাসিরাবাদ / ও আর নিজাম রোড এলাকায় থাকতে চান তাদের জন্য আদর্শ। ভাড়া : ২৫০০/৩০০০ টাকা।
৫. হোটেল ল্যান্ডমার্ক, ৩০৭২ শেখ মুজিব রোড, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম : আগ্রাবাদে থাকার জন্য ভালো হোটেল। ভাড়া-২৩০০/৩৪০০ টাকা।